যানজটের শহর বগুড়া

Passenger Voice    |    ০১:২২ পিএম, ২০২৪-০৪-০৮


যানজটের শহর বগুড়া

আমার বাসা থেকে অফিসের যে দূরত্ব তা এক কিলোমিটারও হবে না। রিকশায় অফিসে পৌঁছতে সময় লাগার কথা সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। কিন্তু যানজটের কারণে ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের আগে পৌঁছানোই যায় না। বগুড়ার খান্দার এলাকার বাসিন্দা ব্যাংকার মামনুর রশিদ এভাবেই শহরের যানজটের কথা জানান। অপ্রশস্ত সড়ক, যেখান-সেখান গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত ভাড়াসহ বিভিন্ন অনিয়মে জেলা শহরটিতে যানজট যেন কোনোভাবেই কমে না। প্রতিনিয়ত তাই নাকাল হচ্ছে শহরবাসী।

বগুড়ায় যানজটের অন্যতম কারণ শহরের মাঝ দিয়ে যাওয়া রেললাইন। ২৪ ঘণ্টায় শহরের তিনটি রেলক্রসিং অতিক্রম করে ১৬টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে। প্রতিবারে সময় লাগে ১৫ মিনিট। এর মধ্যে দিনের ৮ বারে যায় প্রায় ১২০ মিনিট। এই দুই ঘণ্টা রাস্তার দু’পাশে যে দীর্ঘ যানজট হয় তা ছুটতে লাগে অনেক সময়। এ ছাড়া শহরের রাস্তাগুলো ৬০ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছিল ২০০৩ সালে। এরপর গত ২০ বছরে আর এক ফুটও প্রশস্ত করা হয়নি। অথচ গাড়ির চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। এর মধ্যে চলাচল করে লাইসেন্স ছাড়া শত শত রিকশা ও অটোরিকশা। পৌর কর্তৃপক্ষ শহরে ৬ হাজার ২০০ প্যাডেলচালিত রিকশা চলার লাইসেন্স দিলেও ব্যাটারিচালিত মিলিয়ে এমন রিকশা চলে তিন থেকে চার গুণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অনুমতি না থাকা প্রায় ৭ হাজার ইজিবাইক। 

জেলা শহরটিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ডই আছে ছয়টি। দত্তবাড়ি, গোহাইল রোড, চেলোপাড়া, স্টেশন রোড, শেরপুর রোড ও চারমাথায় এসব স্ট্যান্ডের কারণে যানজট লেগেই থাকে। শহরের মধ্যে দূরপাল্লার বাস টার্মিনালও আছে। এ ছাড়া দিনেও শহরের মধ্যে চলে ট্রাক। রাস্তা ঘেঁষে রাখা মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন গাড়ি পার্ক করে রাখায় অপ্রশস্ত সড়ক হয় আরও ছোট।  

রাস্তা ছেড়ে হেঁটে যে গন্তব্যে যাবেন সে সুযোগও কম। কারণ ফুটপাত ভাড়ার ব্যবসাও চলে এ শহরে। দোকানিরা তাদের সামনের অংশ নির্দিষ্ট টাকায় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের ভাড়া দেন। শহরে এমন ভ্রাম্যমাণ দোকানের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। ভ্রাম্যমাণ এসব দোকানিরা জানান, প্রতিদিন ২০০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয় মূল দোকানের মালিককে। 

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি মাসেই যানজট নিয়ে সমন্বয় কমিটির সভায় কথা ওঠে। গত ১১ বছরে ১১ বার উদ্যোগ নিতে দেখলাম, কিন্তু যানজট থেকে মুক্তি মেলেনি। 

বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, কিন্তু নানা অজুহাতে অবৈধ রিকশা চলছে। ফুটপাতও ভাড়া দেয় কেউ কেউ। যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে স্ট্যান্ড লিজ দেওয়ার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। 

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, যানজট নিয়ন্ত্রণে আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, শহরের যানজট স্থায়ী নিরসনের জন্য ২০২২ সালের কমিটি যে সুপারিশ করেছে তাতে রেললাইন স্থানান্তর, শহরের রাস্তা প্রশস্ত করার কথা বলা হয়েছে। রেললাইন স্থানাস্তর বা ওভার ব্রিজের মতো করে রেললাইন করার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি। এ দুটি কাজ করা হলে যানজট থাকবে না।